ব্যাগেজ রুলসের আওতায় সোনার বার ও অলংকার আনার সুবিধার যথেচ্ছ অপব্যবহার চলছে। ডলার সংকট, চোরাচালান ও অর্থপাচারেও এর প্রভাব পড়ছে। এবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আজ এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাজুস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে বাজুসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাগেজ রুলস পরিবর্তনের দাবি তোলা হয়েছিল। বর্তমানে ব্যাগেজ রুলসের আওতায় একজন যাত্রী সারা বছরে যতবার খুশি শুল্কমুক্ত সুবিধায় ১০০ গ্রাম সোনার বার ও অলংকার আনতে পারে। তবে বাজুস বলেছিল, একজন যাত্রী যাতে বছরে একবারের বেশি এই সুবিধা না পায় এবং ১০০ থেকে কমিয়ে ৫০ গ্রাম করা হয়।
এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাগেজ রুলের সমন্বয় করার কথাও বলা হয়েছিল।
এ ছাড়া ব্যাগেজের অপব্যবহারের কারণে ডলার সংকট, চোরাচালান ও অর্থপাচারে কী প্রভাব পড়ছে, তা নির্ধারণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনার আহবান জানানো হয়েছিল।
বাজুসের তথ্য বলছে, সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনা ও হীরার অলংকার ও বার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে, বছরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিনিয়ত স্থানীয় বাজারে সোনার দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সোনার পাইকারি বাজার।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশে সোনা চোরাচালানের অন্যতম রুট দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত। তাই পরিস্থিতি উত্তরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, চোরাচালান প্রতিরোধ, দেশে বৈধ পথে সোনা আসছে না কেন, ব্যাগেজ রুলসের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও এ খাত থেকে রাজস্ব আদায় কিভাবে বাড়ানো যায়—বৈঠকে মূলত এসব বিষয়েই আলোচনা হবে।
এ ছাড়া বাজুসের পক্ষ থেকে যেকোনো যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে। এনবিআর সূত্র জানায়, সব শেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জুয়েলারি খাত থেকে ভ্যাট আদায় হয়েছিল ১০৮ কোটি ৯৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। দেশে জুয়েলারি খাতে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ। সে হিসাবে আলোচ্য অর্থবছরে সারা দেশে জুয়েলারি বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার ১৭৯ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে দেশে সোনার বাজার প্রকৃতপক্ষে আরো অনেক বড়। দেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টন সোনার চাহিদা আছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
অন্যদিকে ঢাকা কাস্টমসের তথ্য মতে, শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই ২০২০ সালে ২.৭৭৫ টন, ২০২১ সালে ২৫.৬৮৯ টন, ২০২২ সালে ৩৫.৭৩৩ টন এবং ২০২৩ সালে ৩১.৪৬৮ টন সোনার বার ব্যাগেজ রুলসের আওতায় আমদানি হয়েছে, যার প্রায় পুরোটাই এসেছে শুল্কমুক্ত সুবিধায়। বৈধ পথে সোনা আমদানি না হওয়ার পেছনে তাই ব্যাগেজ রুলসের সংশোধন প্রয়োজন বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।