বাজুসের পক্ষ থেকে কিছু চাহিদা আছে, খুব সিম্পল। আমরা সবাই শিল্পের কথা বলি। কিন্তু শিল্প কেন করব আমরা? শিল্পকারখানা করার জন্য কিছু নীতি দরকার। এটা আমাদের সরকার চেষ্টা করছে বানানোর জন্য। আমরা তাতে খুশি। অনেকেরই প্রশ্ন- আমরা কীভাবে ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব? আমরা গার্মেন্টসে কি ভারতের আগে যাইনি? বাংলাদেশ কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আমরা জুয়েলারিতেও পারব। আপনারা বিশ্বাস করেন আর না করেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি যেখানে অনেক বড় বড় জুয়েলারি আছে সেখানে বাংলাদেশের লোকজন কাজ করেন। বাংলাদেশের মতো সূক্ষ্ম হাতের কারিগর কিন্তু দুনিয়ার আর কোথাও নেই। এটা কিন্তু বোঝার ব্যাপার আছে।
বাংলাদেশের আরেকটা বড় ব্যাপার হলো গোল্ডের ব্যবসা নাকি স্মাগলিং করে। করবে না কেন? দুবাই থেকে গোল্ড আনলে ট্যাক্স ফ্রি। বাংলাদেশে আপনারা হেভি ভ্যাট-ট্যাক্স করে রাখছেন। সবার দাবি একটাই- ট্যাক্স ফ্রি করে দেন তাহলে আর স্মাগলিং হবে না। এটা চাইলেই তো হবে না, সরকারকে আমাদের সহায়তা করতে হবে কিছু কিছু বিষয়ে। এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়কে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। স্মাগলিংটা কীভাবে বন্ধ করা যায়? দুবাই থেকেই প্রধানত চোরাচালানটা হচ্ছে। এটা সবাই জানি, এটা ওপেন হয়ে গেছে এখন। চোরাচালানের মাধ্যমে আনলে দেখা যায় কিছু একটা মার্জিন থাকে। এ ট্যাক্স-ভ্যাটটা সরিয়ে দেন দেখবেন চোরাচালানটা আর হবে না। একদম সোজা হয়ে যাবে এটা।
বাংলাদেশ কিন্তু তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আমরা জুয়েলারিতেও পারব। আপনারা বিশ্বাস করেন আর না করেন। আমি নিজের চোখে দেখেছি যেখানে অনেক বড় বড় জুয়েলারি আছে সেখানে বাংলাদেশের লোকজন কাজ করেন। বাংলাদেশের মতো সূক্ষ্ম হাতের কারিগর কিন্তু দুনিয়ার আর কোথাও নেই...
আরেকটা বলার বিষয় হচ্ছে, জুয়েলারি খাতে আপাতত ৪৪ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত রয়েছে। যদি আমরা সরকারের সহযোগিতা পাই। সঠিকভাবে উৎসাহ দেয়। আমি মনে করি এটা হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিল্প। আমরা মনে করি জুয়েলারি ফ্যাক্টরি করতে না জানি কত টাকা লাগে। আমার মতে ৫০ লাখ বিনিয়োগ করেও শুরু করা যেতে পারে। কোনো কিছুই এক দিনে বড় হয় না। বটগাছ হতে কিন্তু সময় লাগে। আমরা যেমন একটা ইন্ডাস্ট্রি করছি ইনিশিয়ালি ৬ হাজার লোক কাজ করবে জুয়েলারি ফ্যাক্টরিতে। আমাদের পরিকল্পনা আগামী পাঁচ বছরে প্রায় ৩০ হাজার লোক কাজ করবে এ ইন্ডাস্ট্রিতে, একবার হয়ে যাওয়ার পর ইনশা আল্লাহ। আমরা ৬ হাজার দিয়ে শুরু করে ৩০ হাজারে যেতে পারলে ছয়জন দিয়ে শুরু করে ৬০ জনে যাওয়ার মতো ১ হাজার ইন্ডাস্ট্রি করা সম্ভব। দেখবেন এতে নতুন একটা ডিরেকশন এসে পড়বে।
শিল্প মন্ত্রণালয় অনেক জায়গায় এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন করে দিচ্ছে। এ শিল্পের জন্য একটা নিরাপদ জায়গা দরকার। ৩০০ থেকে ৪০০ জন ব্যবসায়ী বলেছেন আমাদের একটা নিরাপদ জায়গা দেন বসুন্ধরার ভিতরে। আমি বললাম- ভাই, বসুন্ধরার মধ্যে ইন্ডাস্ট্রি করা যাবে না। আমি মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাব ঢাকা মেট্রো পয়েন্টের আশপাশে একটা জায়গা দেওয়ার জন্য। ৩ হাজার বিঘা বা ১ হাজার একর জায়গা চাইব আমি। জমি দিলে দেখবেন জুয়েলারি রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের জন্য সবাইকে ১০ বছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রি দেওয়া হয়। আমরাও যদি এ সুবিধা পাই দেখবেন সবকিছু শিথিল হয়ে যাবে। রপ্তানি বাড়বে, সবকিছু লিগ্যাল ফরম্যাটে চলে আসবে। আমাদের আইন সংস্কার না করলে কোনো দিনই বাংলাদেশে চোরাচালান বন্ধ হবে না। যে যত বড় বড় গানই দিই, যে যত বড় বড় কথাই বলি। আইন শিথিল করেন, ট্যাক্সেশন শিথিল করেন সবকিছু সোজা হয়ে যাবে।
গার্মেন্টসে ভ্যালু অ্যাডিশন বেশি নেই। সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৭ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন হয়। যেখানে জুয়েলারিতে ৫০ শতাংশ ভ্যালু অ্যাডিশন করা সম্ভব। যদি মনোযোগ দেন বাংলাদেশে ডিজাইনারের অভাব নেই। চারুকলার ছেলেমেয়েরা এত সুন্দর নিখুঁত কাজ করেন। কিন্তু আমরা কাউকে উৎসাহ দিই না ভাই। দেশের মানুষকে কাজে লাগান। একটা সময় বাংলাদেশকে বলা হতো তলাবিহীন ঝুড়ি। আজকে কি আমরা তলাবিহীন ঝুড়িরে ভাই, না। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় চিন্তায় পড়ে গেল এ দেশের মানুষ খাবে কী। আজ কিন্তু ১৮ কোটি মানুষ। খাবারে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। সব দিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। শুধু পলিসি ঠিক করেন, ট্যাক্সেশন ঠিক করেন। ইনশা আল্লাহ সবকিছু সমাধান করা সম্ভব। মন্ত্রীর কাছে আবেদন- আপনি আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ঢাকার ভিতরে আমাদের ১ হাজার একর জমি দেবেন জুয়েলারি শিল্প করার জন্য।