স্বর্ণালংকার রপ্তানির প্রত্যয় নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সোনায় বিনিয়োগ, ভবিষ্যতের সঞ্চয়’।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাজুসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, বাজুসের সাবেক সভাপতি ও উদযাপন কমিটির কো-চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার রায়, উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব ও বাজুসের সহসভাপতি গুলজার আহমেদ ও বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বর্ণশিল্পে যাঁরা আছেন, তাঁদের সংগঠিত করে আমরা যদি রপ্তানি করতে পারি, তাহলে গার্মেন্টের থেকে অনেক বেশি রপ্তানি সম্ভব। গার্মেন্টের চেয়ে চারগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা পেতে পারি। বাংলাদেশের কারিগরদের বিশ্বজুড়ে সুনাম রয়েছে। হাতের কাজে তাঁরা পৃথিবীর সেরা।
আমি যতদূর জানি, বাংলাদেশ থেকে অনেক কারিগর বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন। যখন তাঁরা জানতে পেলেন বাংলাদেশেও একটা রিফাইনারি হবে, সবাই তাকিয়ে আছেন কখন এটা শুরু হবে। কখন আমরা বাংলাদেশে গিয়ে কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাজুসকে আস্তে আস্তে আরো শক্তিশালী হতে বলব।
এই শিল্পের যে সম্ভাবনা, প্রধানমন্ত্রী ক্ষণে ক্ষণে সচিবালয়ে স্বর্ণ রিফাইনারির খবর নেন। রিফাইনারিতে যে আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। আজকে যাঁরা শুধু স্বর্ণ বিক্রি করেন, আমি নিশ্চিত তাঁরা সবাই একেকজন শিল্পপতি হতে পারেন। আপনাদের এই স্বর্ণ সারা বিশ্বে রপ্তানি করতে পারবেন।’
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আজকের এই শুভক্ষণে আমি শুধু একটি কথা বলব, বাজুসের প্রেসিডেন্টের একটা স্বপ্ন, তিনি একটা স্বর্ণের পার্ক বানাচ্ছেন বসুন্ধরা সিটিতে।
একটা রিফাইনারি করছেন। আমি বলব বাজুসের ব্যবসায়ীরা একটা শিল্প-কারখানা করেন, যেখানে সব স্বর্ণশিল্পী স্বর্ণ এনে রপ্তানি করেন এবং সবাই এর সুফল পাবেন। বাজুসের ব্যবসায়ীরা যদি শিল্প-কারখানা করেন, তাহলে আমি ৪০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটা ফ্লোর দিতে পারি ঢাকার আশপাশেই। বাজুসকে আমি এটা উপহার হিসেবে দিতে চাই। সেখান থেকে আপনারা সারা বিশ্বে রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেন। দেশের পণ্য দেশে রাখলে হবে না। আমাদের সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে বেশ কিছু বন্ধু বলল, গার্মেন্ট খাতে এক কনটেইনার পণ্য পাঠালে ২০ থেকে ৩০ হাজার ডলার পাব। স্বর্ণ শিল্পীরা স্বর্ণ তৈরি করে যদি এক কনটেইনার পাঠান, সেখান থেকে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আমরা পেতে পারি। আমাদের স্বর্ণশিল্পের যে সম্ভাবনা, সেটা আপনাদের এগিয়ে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ৫০ বছর পর একটা রিফাইনারির অনুমতি দিয়েছেন। অনেকেই বলেছিল, বাংলাদেশ রিফাইনারি করতে পারবে তো। তিনি বলেছিলেন, অন্যান্য দেশ পারলে আমরাও পারব। আমাদের জন্য এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ, যুদ্ধ ও করোনার কারণে কিছুটা পিছিয়ে গেছে। আশা করি, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রিফাইনারির কাজ পুরোদমে শুরু হবে।’
আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘আমি অনুরোধ করব বাজুসকে আমরা যে ফ্লোরটা দেব, সেখানে উৎপাদন ও রপ্তানির কাজ শুরু করুন। ইচ্ছা করলে এক হাজার কর্মচারী দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। বাজুসের এক হাজার ২০০ সদস্য, ১০ জন করে হলেও ১২ হাজার লোক সেখানে কাজ করতে পারবে। এই স্বর্ণ রপ্তানি হলে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে আপনাদের অনেক অনেক সুবিধা হবে।’
স্বর্ণমেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইসিসিবিতে যে স্বর্ণের মেলা হয়েছে, সেটা বেশ সাড়া ফেলেছে। আমি বলব গতবার তিন দিন ছিল, এবার সাত দিন করুন। গত বছর অনেক মেয়ে যেতে পারেনি। প্রতিবছরই একবার মেলা করেন। আমি নিশ্চিত যে এতে করে দেশের স্বর্ণের বাজার সারা পৃথিবীতে চলে যাবে। যখন স্বর্ণ আমরা রপ্তানি করব, তখন বাংলাদেশের জিডিপি ২ শতাংশ এগিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আমাদের লাখ লাখ শ্রমিক কাজে লাগাতে পারব।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন কাজী সিরাজুল ইসলাম, গুলজার আহমেদ ও ডা. দিলীপ কুমার রায়।
বাজুসের প্রতিষ্ঠাতা ৭ সদস্যকে সম্মাননা
বাজুসের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখায় সম্মাননা প্রদান করা হয় সাত সদস্যকে। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন সৈয়দ সামসুল আলম, কাজী সিরাজুল ইসলাম, সত্য রঞ্জন ব্রহ্ম, জগদীশ চন্দ্র সরকার, আলাউদ্দিন আহমেদ, খবির উদ্দিন ও আব্দুল লায়েস। তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। এ ছাড়া বাজুসের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশে স্বর্ণের দোকান ও আশপাশের এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। বের করা হয় শোভাযাত্রা। দিনব্যাপী দেশের ৪০ হাজার জুয়েলার্স পরিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন।
বাজুস সূত্রে জানা গেছে, জুয়েলারি খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। সরকারের নীতি সহায়তা, উৎসাহ ও কর প্রণোদনা পেলে এ শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের মতো দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
বাজুস জানায়, ঢাকা শহরে জুয়েলারি ব্যবসা করতে গিয়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে ১৯৬৬ সালের ১৭ জুলাই বাজুস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাজুসের ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ক্রেতাসাধারণকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর। তিনি বলেন, ‘এ শিল্পের উন্নয়নে আমাদের আরো বিনিয়োগ করতে হবে এবং নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেও নীতি সহায়তা দিতে হবে।’
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বিকেল ৫টার পর থেকে ঢাকা মহানগরের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিল বাজুস।