বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিদেশে যে বাজার আছে, পরিষ্কার দেখাচ্ছে, তা যদি আমরা না ধরতে পারি তাহলে কিন্তু আমরা ভুল করবো। গার্মেন্টস শিল্পকে যদি সুবিধা দিয়ে এ জায়গায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে স্বর্ণকেও নিয়ে আসা যাবে। এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস যে সুবিধা পায়, এটারও পাওয়া উচিত, কারণ এটাও এক্সপোর্ট আইটেম।
শনিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) আয়োজিত ‘অর্থনীতিতে জুয়েলারি শিল্পের অবদান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, এ সেক্টর নিয়ে কোনো গবেষণা হয় না। বাজুসকে আমি ধন্যবাদ জানাই। গত ৩ দিন ধরে যে আয়োজন, এটি বিভিন্ন জায়গায় সাড়া ফেলছে। আমাদের পৃথিবীতে আমরা যখন বিনিময় প্রথা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি, তখনই সমস্যা শুরু হয়। প্রকৃতগত কারণে। একটা সময়ে এসে মানুষ স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন হয়। বর্তমানে টাকার সার্কুলেশন থেকে শুরু করে সব কিছুর পেছনে স্বর্ণের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। চায়না, ভারতের মতো দেশগুলো এখন স্বর্ণ রিজার্ভ করছে, যে কারণে এসব জায়গায় চাহিদা বাড়ছে। স্বর্ণ অনেক মূল্যবান একটা পণ্য, কিন্তু, আমরা কেনো যেন এটার গুরুত্ব বুঝতে পারি না।
তিনি বলেন, এখনই আদর্শ সময়। সামনে আমাদের যা প্রজেকশন, আমাদের জিডিপি বাড়ছে, মাথাপিছু আয় বাড়ছে, আমাদের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বাড়বে। তখন কিন্তু স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়বে। যে বিশাল মার্কেটের কথা বলা হচ্ছে, যে বিশাল সম্ভাবনার কথা বলে হচ্ছে, আমি দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে, একটু স্ট্রাকচার্ড, সুপরিকল্পিত হলে সফল হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, খনিপ্রধান দেশ কিন্তু স্বর্ণ ব্যবসায় আগায়নি। এগিয়েছে যারা কাঁচামাল আমদানি করে স্বর্ণ রফতানি করেছে। রফতানি বাজারে আমাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে গেলে আমাদের আমদানিও বাড়াতে হবে। প্রতি বছর ৪৭০০ টনের মতো স্বর্ণ লেনদেন হয়ে থাকে। বলার বিষয় হলো, ১০টি বড় দেশের মধ্যে ৬টিই এশিয়ার দেশ। এটিও আমাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা। আমাদের দেশে স্বর্ণের বাজার কত বড়, সেটি আমরা জানি না। এটির বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকতে হবে বিনিয়োগকারীদের কাছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, আমাদের যে রপ্তানি আয়, সেটার ৮৬ শতাংশ আসে একটা খাত থেকে। এতোদিন ধরে আমাদের দেশ একটা খাতের উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে, এটা আসলে খুব সুবিধাজনক কিছু না। আমরাও চাই রপ্তানি আয় বিকেন্দ্রীকরণ হোক। আমরা যখন টাকা জমাই তখনও আমরা বিভিন্ন জায়গায় জমাই, যাতে একটা জায়গা ধ্বসে গেলেও বিপদ না হয়৷ সেজন্য, বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নতুন সেক্টর এলে আমরাও সেটাকে সহায়তা করতে চাই। আপনাদের ইস্যুগুলো নিয়ে যদি বাজুসের তরফ থেকে প্রস্তাব দেন, আমরা যাতে সরকারের সাথে কথা বলতে পারি।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের দক্ষতা আছে, কারিগর আছে। সবই আছে, কিন্তু আমরা এই বাজারটা ধরতে পারলাম না। আমাদের রাজস্ব বিভাগের একটা প্রবণতা ছিল, সোনাকে নিষিদ্ধ করা, এর মাধ্যমে আমাদের রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। এই শিল্পের প্রসারে সরকারিভাবে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে৷ এটা হাজার-হাজার বছর ধরে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অংশ।
বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির বলেন, আমরা শুধু উৎসবকে কেন্দ্র করে এটাকে একটা বিনিয়োগ হিসেবে দেখি। আমাদেরকে স্বর্ণকে একটা নৈমিত্তিক ভোগ্যপণ্য হিসেবে চিন্তা করতে হবে। ক্যারেট কমিয়ে বা অন্যভাবে এটা করা সম্ভব। উত্তম মূল্যে পণ্য অবশ্যই তৈরি করবেন। একইসঙ্গে, ডিজাইনের ক্ষেত্রেও উৎসবকেন্দ্রিক চিন্তা বাদ দিয়ে একটু ভিন্ন ধরনের ডিজাইন চিন্তা করতে হবে। পাশাপাশি, আমাদের এসএমই লোনের ক্ষেত্রেও যে পলিসি আছে, সেটা পরিবর্তনের জন্য আপনাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে। এতে করে, ডিজাইন এবং ক্যাপিটাল এর জায়গাটায় আপনারা এগিয়ে যেতে পারবেন। পাশাপাশি একটি ভিশন ঠিক করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বাজুসের সাবেক সভাপতি দিলীপ কুমার রায় বলেন, সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে স্বর্ণ শিল্পের উন্নয়নে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খাতের উন্নয়নে ভূমিকা নিচ্ছেন। এজন্য বিদেশে শ্রমিকদের ১০০ গ্রাম স্বর্ণ ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছেন। আমাদের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর এ বিষয়ে একটা বিস্তারিত পরিকল্পনা দিয়েছেন। কিভাবে কাঁচামাল প্রক্রিয়া করব, কীভাবে ডিজাইন হবে। সব।
বাজুসের সহ-সভাপতি ড. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হলে, আমাদের এই জুয়েলারি শিল্পকে বাড়াতে হবে। আমাদের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে আজ ৪০ হাজার ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ। আশা করছি আমাদের স্বপ্ন সফল হবে।
সেমিনারে সারাদেশ থেকে আগত স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অংশ নেন।