গত কয়েক বছর ধরে প্রাক বাজেটের বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) দাবি পূরণের অঙ্গিকার করলেও বাস্তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন। জুয়েলারি শিল্পে যখন নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার উৎসাহ প্রদান করছে বাজুস, ঠিক তখন এনবিআর নীতি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছে না। পাশাপাশি সারাদেশের জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের নামে হয়রানি করছে। এ ছাড়া ১০ টাকা ভ্যাট আদায়ের আড়ালে ৯০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এই ঘুষের সংস্কৃতি থেকে এনবিআরকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন আজ রোববার (৯ জুন) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে বাজুসের কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বাজুস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, বাজুসের মুখপাত্র ও সাবেক সভাপতি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দিলীপ কুমার রায়, বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল প্রমুখ।
সরকারের সাফল্য যাত্রায় অংশীজন হতে চেষ্টা করছে বাজুস জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, জুয়েলারি শিল্প সম্পর্কিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা-(২০১৮) সংশোধিত-২০২১’ সংশোধনের তিন বছর পরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অসম শুল্ককর কাঠামো, প্রাথমিক কাচাঁমাল ও মেশিনারিজ আমদানিতে কালক্ষেপণ ও অতিরিক্ত শুল্কব্যয়, সঠিক নীতিমালার অভাব এই খাতকে দেশীয় অর্থনীতি থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে সেমি ম্যানুফ্যাকচারিং গোল্ডের ক্ষেত্রে এআইটি বাতিল করায় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আনোয়ার বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাগেজ রুল প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্যাসেঞ্জার আসার ক্ষেত্রে কাস্টমস শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্যে ২৪ ক্যারেটের গহনার ওপর হালকা ডিজাইন করে সোনার অলংকার বলে নিয়ে আসে। সেক্ষেত্রে ধারা-২, ব্যাগেজ রুল ২০২৩-এর ক্ষেত্রে সোনার অলংকারের সংজ্ঞা সংযোজন করার প্রস্তাব করছি। বাজুস অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছে।’
ব্যাগেজ রুল সংশোধন করার মাধ্যমে, সোনার বার ও রূপার বার আনা বন্ধ করতে হবে মন্তব্য করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাগেজ রুলের সুবিধা নিয়ে অবাধে সোনার বার বা পিন্ড বিদেশ থেকে দেশে প্রবেশ করছে। চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। যদিও প্রকৃত অর্থে সোনা চোরাচালান বন্ধে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রস্তাবিত বাজেটে। প্রস্তাবিত বাজেট জুয়েলারি শিল্পের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এনবিআরের পক্ষ থেকে প্রাক বাজেট বৈঠকগুলোতে ব্যবসায়ীদের সমস্যা ও দাবি পূরণে দফায় দফায় আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। বারবার বৈধ পথে সোনার বার, কয়েন ও সোনার অলংকার তৈরি ও রপ্তানিতে উৎসাহ প্রদান করা হবে বলা হলেও, এই খাত সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির উপর অসম শুল্ক হারের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে জুয়েলারি অংলকার বিক্রির ওপর রয়েছে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট। ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিত উৎসে কর হারের বোঝা। এভাবে অপরিকল্পিত আমদানী শুল্ক-করহার এবং কাঠামোগত শুল্ক ও শিল্পবান্ধব নীতি প্রণয়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতা জুয়েলারি শিল্পকে পিছিয়ে দিয়েছে।
দেশের জুয়েলারি খাতকে গার্মেন্টস শিল্পের ন্যায় রপ্তানীমুখী শিল্প হিসাবে পরিচিতির লক্ষ্যে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন মনে করে বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারি প্রণোদনা ও মেশিনারিজ আমদানীতে শুল্ক-কর রেয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বর্ণ শিল্পীদের হাতে তৈরী গহনা স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারে সমানভাবে সমাদৃত। কিন্তু এই খাতের সঠিক পরিচর্যার অভাবে স্থানীয় স্বর্ণ শিল্পীরা কাজের অভাবে দুঃখ-দুর্দশায় জীবন-যাপন করছেন। স্থানীয় কারিগররা পেশা বদল করে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এই সঙ্কট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।